সিসি নিউজ: এসো হে বৈশাখ এসো এসো…! আজ সোমবার বাংলা নববর্ষ ১৪২১-এর প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যধারার এক অনন্য দিবস। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। দিনটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে সারাদেশে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে মেলা, হালখাতা, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, ঐতিহ্যবাহী খেলাসহ নানা আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমী নববর্ষকে বরণ করতে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সকাল সাড়ে ৭টায় বর্ষবরণ সংগীতের মধ্যদিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। একক বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১ বৈশাখ থেকে ১০ বৈশাখ পর্যন্ত বইয়ের আড়ং (মেলা) অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন বেলা ১১ টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ মেলা চলবে।এ আড়ংয়ে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই শতকরা ৩৫-৬০ ভাগ ছাড়ে বিক্রি হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ নানা সংগঠন দিবসটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
এছাড়া দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৪ টায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন একাডেমির মহাপরিচালক। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি।এ পর্যায়ে সভাপতিত্ব করবেন বিসিক’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে ৩দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সন্ধ্যা ৬ টায় জাদুঘর প্রাঙ্গণে লোকসঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পীবৃন্দ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম আজিজুর রহমান।
প্রতিবছরের মতো এবারও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বর্ষবরণের নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ধানমন্ডি সরোবর মঞ্চে এ উপলক্ষে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। বৈশাখ উপলক্ষে পোশাক ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শাহবাগের নিত্য উপহার গ্রীষ্ম সাময়িকী ।এবারের প্রদর্শনীতে গ্রীষ্মের উপযোগী পোশাক, শাড়ি ও টি শার্ট থাকছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের শৌখিন ও প্রফেশনাল ১৪ জন আলোকচিত্রির আঁকা ছবি এখানে স্থান পেয়েছে।
ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী দিনটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭ টায় শিশুপার্কের সামনে নারকেলবিথী চত্বরে ঐতিহ্যবাহী প্রভাতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করবে। এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বেসরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান এমপি। বাংলাদেশ ও ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীরা আবৃত্তি,নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। সকালে প্রেসক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য খৈ, মুড়ি, মুড়কি,বাতাসা ও খিচুড়ী, ইলিশ সহযোগে প্রাত:রাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর ‘এসো হে বৈশাখ এসো’ গান দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। দুপুরে বিশেষ মধ্যাহ্ন ভোজ হবে দেশীয় খাবার দিয়ে। এছাড়া গ্রামবাংলার প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া বায়োস্কোপ প্রদর্শনী,সাপ ও বানরের নাচ এবারের প্রধান আকর্ষণ।
এছাড়া আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১১ টায় ১০ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ডেন প্লাজায় ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু,দেশের উন্নতি,অগ্রগতি,সমৃদ্ধি কামনায়’ মিলাদ মাহফিল ও দোয়া’র আয়োজন করছে। মৈত্রী থিয়েটার ও নাট্যদলের যৌথ আয়োজনে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করা হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নববর্ষ উপলক্ষে দিনব্যাপী এক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য সকাল সাড়ে ৯ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
সৈয়দপুরে ব্যাপক আয়োজনের মধ্যেদিয়ে বৈশাখ উপযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এদিন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রেলওয়ে মাঠ থেকে বর্নাঢ্য র্যালীর আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে র্যালী ও পান্তা ভোজনের আয়োজন সহ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছে।
সরকারি কর্মসূচী
আজ ১৪ এপ্রিল সোমবার, পহেলা বৈশাখ- বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিনটি উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কমসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। আজ সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া বাংলা নববর্ষের দ্বিতীয় দিন আগামী মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ, নেতৃস্থানীয় লেখক, কবি, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান করবেন। এদিকে বাংলা নববর্ষ ১৪২১’ উদযপনকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিভাগীয় শহর এবং ৫৭ জেলা সদরে (বিভাগীয় সদর ব্যতিত) ও সকল উপজেলায় (সদর উপজেলা ব্যতিত) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটসমূহ ও বিসিক নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করবে।
পক্ষান্তরে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। সকল জাদুঘর ও প্রত্মস্থান সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে (শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা টিকেটে)।
সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। সকল ৫ তারকা হোটেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি টিভি ও বেতার বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং স্ব-উদ্যোগে বাংলা নববর্ষের উপর বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলসমূহ রমনা বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।