সিসি ডেস্ক: ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। দল ক্ষমতায়। উপজেলা নির্বাচনেও তাদের অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পূর্ববর্তী যে অবস্থা ছিল দলের; এখন সেই অবস্থার ব্যাপক উত্তোরণ ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠের নেতা-কর্মীরা বেশ চাঙা ও উজ্জীবিত। আর মাঠও এখন তৃণমূলের দখলে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এজন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তার সঠিক সিদ্ধান্তের কারণেই সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আজ উজ্জীবিত।
দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের সংগঠনকে চাঙা করার জন্য আগে থেকেই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নানা কর্মসূচি হাতে নেন। এরমধ্যে ছিল গত ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করা এবং ২০১৩ সালের ২২ জুন পর্যন্ত দলের সবগুলো সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সাথে বৈঠক করা।
জানা গেছে তৃণমূল চাঙা রাখতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এসময়ের মধ্যে দলের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৪টি জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। দলের তৃণমূল নেতাদের সাথে এই সিরিজ বৈঠকগুলোর উদ্দ্যেশই ছিল দলের তুণমূলকে শক্তিশালী করা। এবং নেতাকর্মীদের চাঙা রাখার কৌশল। সফলও হয়েছেন তিনি। এ বৈঠকগুলোর ফলে তৃণমূলে জমে থাকা নানা রকম বিরোধ অনেকটা মীমাংসাও হয়েছে। অনেকস্থানে নেতৃত্বও তৈরি হয়েছে। সংগঠন হয়েছে উজ্জীবিত।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক প্রতিযোগিতা বা নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকায় তৃণমূলের সংগঠন দিন দিন শক্তিশালীই হচ্ছে। সরকারবিরোধী যে কোনো আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ক্ষমতাসীন দলের এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। দলের নেতাকর্মীরাও বেশ সচেতন। আওয়ামী লীগ ও এর অংগ সংগঠনের সকল নেতাকর্মীই মনে করেন, এটা সম্ভব হয়েছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দুরদৃষ্টি অভিজ্ঞতা ও নিরলস পরিশ্রমে।
এদিকে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই তৃণমূল জানান দিয়েছে তারা কেন্দ্রের চেয়ে অনেক সংঘটিত ও শক্তিশালী। তারা সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। কিছু কিছু কেন্দ্রে বিশৃঙ্খার অভিযোগ থাকলেও সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই তারা দেখছেন। একাধিক জেলা ও উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। তারা জানান, দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না থাকলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় সম্ভব হতো না। জামায়াত অধ্যুষিত অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও বিজয়ী হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কারণেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে ফোন করে থাকেন এবং সংগঠনের খোঁজ-খবর রাখেন। ফোনের মাধ্যমে সাংগঠনিক দিক-নির্দেশনাও তিনি দিয়ে থাকেন। ফলে সংগঠনের তৃণমূল যেমন চাঙা। তেমনি প্রতিনিয়ত আরও শক্তিশালী হচ্ছে তৃলমূল।
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাথে একাধিকবার কথা বলে জানা গেছে, দেশের ও জনগণের কল্যাণে দলের তৃণমূল সংগঠনকে আরও গণমুখী করতে আগামী দিনগুলোতে আরও নানা পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দলটির কার্যক্রম। দলের তৃণমূল চাঙা রাখতে ও আরও সাংগঠনিক শক্তি বাড়াতে সারা দেশের সবগুলো উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়গুলোতে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণভাবে তথ্যকেন্দ্র চালু করা হচ্ছে। তৃণমূল সংগঠনকে আরও আধুনিক ও যুযোপযোগী করতে তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। স্থানীয় এমপিদের সাথে তৃণমূলের সাংগঠনিক সংযোগ আরও বাড়ানোসহ তৃলমূল সংগঠনকে সবসময় চাঙা রাখতে যা যা করণীয় তাই করা হচ্ছে।
তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর আগে গত ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের কাছে লেখা এক চিঠিতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শাখার সম্মেলন শেষ করার কথা জানিয়েছিলেন। জানা যায়, এই কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে তৃণমূল চাঙা রাখতে দলে সহসম্পাদক পদে তিন দফায় প্রায় সাড়ে ৪শ সহ-সম্পাদক নিয়োগ করা হয়েছে। যারা সহ-সম্পাদক হয়েছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের অভিজ্ঞ ছাত্রনেতা এবং সাংগঠনিক। তৃণমূল চাঙা রাখতে তারা ভালো ভূমিকা পালন করছেন বলে জানা গেছে। এর আগে তৃণমূলের সংগঠন চাঙা ও শক্তিশালী করার জন্য দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে সাত বিভাগের জন্য সাতটি পৃথক শক্তিশালী টিম।
এতে রংপুর বিভাগের তৃণমূল জন্য গঠিত টিমের প্রধান করা হয়েছে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগের মোহাম্মদ নাসিম, খুলনা বিভাগে মাহবুব-উল-আলম হানিফ, বরিশাল বিভাগে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, সিলেট বিভাগে মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা বিভাগের দেখভালের জন্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে প্রধান করে শক্তিশালী টিম গঠন করা হয়।
উৎসঃ ইনকিলাব