সিসি ডেস্ক: খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে সরকার গ্রাউন্ডওয়ার্ক করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে শাসক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের বিভিন্ন চাপের মুখেও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে সময় নিচ্ছে সরকার। তবে সরকার এখনো ভাবছে গ্রেফতার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে। এ জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারসহ অন্যান্য ঝুঁকি এড়াতে সরকার আপাতত ‘গ্রাউন্ডওয়ার্ক’ করছে। এ জন্য সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। যাতে কোথাও বড় কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে। তবে গ্রেফতারের জন্য সরকার আরো সময় নেবে। শাসক দলের একটি অংশ কোনো নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের বিপক্ষে। তাকে নাশকতার মামলা অথবা দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে। তাকে গ্রেফতার করলে যেন জনপ্রিয়তা বা সহানুভূতি তার পক্ষে না যায় সে হিসাবও চলছে শাসক দলের শিবিরে। আপাতত মহাসড়ক সচল করা নিয়েই ব্যস্ত সরকার।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজেই চাচ্ছেন তাকে গ্রেফতার করা হোক। এজন্য তিনি মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। তবে সরকার চাইছে, দেশব্যাপী জনগণের রোষানলে পড়ে তিনি নিজেই আত্মসমর্পণ করবেন। জনগণই তাকে ঘেরাও করে পুলিশে সোপর্দ করবে। সরকার সময়মতোই তাকে গ্রেফতার করবে। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ৫ জানুয়ারির আগের মতো একচুলও ছাড় দেয়া হবে না।
শাসক দলের নেতা ও মন্ত্রীরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনো বদ্ধপরিকর সরকার। নাশকতাকারীদের একচুলও ছাড় না দেয়ার পক্ষে ক্ষমতাসীনরা। তারা বলছেন, কোথাও বিএনপি মিছিল-সমাবেশ করছে না। সারাদেশে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। এসব বিচ্ছিন্ন নাশকতাকে সন্ত্রাসবাদ উল্লেখ করে তা শিগগিরই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারক।
সরকারের সূত্র জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। গত কয়েক দিন একটু স্থির হয়ে নাশকতা দমনে নতুন কৌশল নিচ্ছে সরকার। নাশকতার নির্দেশদাতাদের টেলিফোন অডিও রেকর্ড সরকারের গোয়েন্দাদের হাতে। গত কয়েক দিনে নাশকতার নির্দেশদাতা বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। সূত্র জানায়, এ সময় তারা নাশকতার বিষয়টি অস্বীকার করলে নিজেদের অডিও রেকর্ডই নেতাদের শোনানো হয়। পরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত বলে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন। এ জন্যই এ কার্যালয়ের ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের কিছু অডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এবং খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতেও দেয়া হচ্ছে না। যেন কেউ বার্তাবাহকের দায়িত্ব পালন করতে না পারেন।
এর পাশাপাশি টানা অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করলে আলোচনায় বসার আগ্রহও দেখাচ্ছে সরকার। নেতারা তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে এমন আভাসও দিয়েছেন। সূত্র জানায়, আটক নেতাদেরও প্রভাবিত করা হচ্ছে নাশকতা নিয়ন্ত্রণ করতে।
এদিকে শাসক দলের নেতাকর্মীদের কোনো দিকনির্দেশনা না দেয়া, নাশকতা দমনে কার্যকর কোনো ‘সুফল’ না আসায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার ব্যর্থ কিনা এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আগে একটি ক্ষুদ্র অংশ সন্ত্রাস করত। এখন সাংগঠনিকভাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা নাশকতা ও সন্ত্রাসবাদ করে যাচ্ছে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে একটু সময় লাগবেই। হানিফ বলেন, সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব এদের ধরিয়ে দেয়া। এদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমেই দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হবে।
একই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদ হলে বারাক ওবামাকে আমরা ব্যর্থ বলি না, ফ্রান্সেও হয়েছে, পত্রিকা অফিসে ঢুকে গুলি করে সিনিয়র সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে। বেলজিয়ামে হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সর্বত্রই শান্তির জয় হয়। বাংলাদেশেও তাই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করেই দেশ এগিয়ে যাবে।
হরতাল-অবরোধের কারণে এসএসসি পরীক্ষা পেছানোর মধ্য দিয়ে সরকার কঠোরতা থেকে সরে আসছে কিনা এমন প্রশ্নে এ নেতা বলেন, বিএনপির এখন টার্গেটই হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। এটাকে তারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। আমরা তাদের ফাঁদে পা দেইনি। দেশের প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাবে না আওয়ামী লীগ ও সরকার। আগে বছরের মাঝামাঝি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হতো। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা এটাকে বছরের শুরুতে নিয়ে এসেছিলাম। বিএনপির রাজনৈতিক বিভীষিকার মধ্যে সরকার ছেলেমেয়েদের ছেড়ে দিতে পারে না। সময় সুযোগে পরীক্ষা চলবে।