।। অনন্য আমিনুল ।।
যুগের পরিবর্তন হচ্ছে হু হু করে। মানুষ পরিবর্তন হচ্ছে তার নিজ নিজ প্রয়োজনে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে ছন্দ ধারায় আজও আমরা পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। সেজন্য শিশু সাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ তাঁর লেখালেখির ব্যাকরণে আক্ষেপ করে বলেছেন, “সময় পাল্টে যাচ্ছে, জীবন পাল্টেছে, সংস্কৃতিতে নতুন আবহ তৈরি হয়েছে, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে পৃথিবীর বহুকিছু পাল্টালেও পাল্টায়নি শুধু আমাদের ছড়া কবিতার আদল। ফলে আমরা পড়ে আছি শতাব্দীর পেছনে। এখনই ভাবার সময়। আমাদের সাহিত্য বিশ্বের প্রধানতম সাহিত্যের সাথে অপরিচিত। এমন অবস্থা চলতে পারে। কারণ রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনান্দ, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, মানিক, বনফুল আমাদের পূর্বসুরী। তাদের ঝাপসা হয়ে যাওয়া পথটা আমাদেরকে আলোয় ভরিয়ে তুলতে হবে।”
তিনি সাহস যুগিয়ে বলেন, “খুব বড় কোন আবিস্কার-উদ্ভাবনে এ মুহূর্তে নাইবা গেলাম। অন্তত আমারা যারা ছড়াপদ্য নিয়ে ভাবি, চর্চা করি-তারা একটু নিরীক্ষা করে আমাদের ছড়াপদ্যের কাঠামোগত আদলতায় একটু নতুনত্ব আনার চেষ্টা করতে পারি।”
তবে বর্তমানে গদ্য ও পদ্য লেখার ধারাতে কিছুটা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। যেমন পশ্চিমবঙ্গের ছড়াকার ও ছড়া গবেষক সতীশ বিশ্বাস গত ১৯৯৫ সালে সাতাশে মে ছড়া লেখার আদল পাল্টিয়ে ‘ছড়াক্কা’ নামে নতুন এক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। দুই বাংলার ছড়াকারগণ তাঁর নতুন এ পদ্ধতিতে ‘ছড়াক্কা’ লিখছেন।
আমি ছড়াক্কা লেখার ধারণা পাই এ বছরের শুরুর দিকে। এরপর আমিও ছড়া সাহিত্যে নতুন একটি ধারা সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে শুরু করি এবং বলা যায় শিশু সাহিত্যিক ফারুক নওয়াজের উৎসাহ থেকেই দীর্ঘ ভাবনার পর গত ১৫/০৩/২০১৫ তারিখ “ত্রিমিল” নামে একটি ছন্দ পদ্ধতির উদ্ভাবন করি এবং সে পদ্ধতিতে প্রথম ‘ইচ্ছে করে’ নামে একটি ছড়া লিখি (ছড়াটি নিচে দেয়া হলো), বর্তমানে আমি পুরতন রীতির পাশাপাশি আমার উদ্ভাবিত নতুন রীতিতে ছড়া লিখছি। এখন এটির প্রতিষ্ঠা পেতে সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ধারাটি সাহিত্যে সংযোজন করতে সকলকে লেখার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে যারা উত্তরাধুনিক সাহিত্যের আন্দোলনে অগ্রপথিক ছড়াশিল্পী তাঁরা প্রাচীন রীতির পাশাপাশি নতুন ধারাটির চর্চা করলে এবং এ ধারায় ছড়া লিখলে এটি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
ত্রিমিল লেখার নিয়ম: প্রতিটি ছড়া হবে তিন স্তবক বিশিষ্ট। প্রতিটি স্তবকে থাকবে পাঁচটি করে লাইন। ছড়ায় প্রথম স্তবকের প্রথম লাইনের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের প্রথম লাইনের অন্ত্যমিল। প্রথম স্তবকের দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইনের সাথে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকের দ্বিতীয় ও পঞ্চম লাইনের অন্ত্যমিল এবং প্রতিটি স্তবকের তৃতীয় ও চতর্থ লাইনের ভিন্ন ভিন্ন অন্ত্যমিল হতে পারে।
ছন্দের লয়: হবে দ্রুত। ছড়ার চরিত্র: হাস্যরস পূর্ণ কিংবা বিদ্রুপাত্মক কিংবা আন্দোলন মূলক কিংবা বেদনাত্মক।
১ম স্তবক:
১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -ক)
২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)
৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ)
৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ)
৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)
২য় স্তবক:
১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -ক)
২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)
৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ/ঙ)
৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ/ঙ)
৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)
৩য় স্তবক:
১ম পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -ক)
২য় পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)
৩য় পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ/চ)
৪র্থ পঙক্তি ৮ মাত্রা (অন্ত্যমিল -গ/চ)
৫ম পঙক্তি ৫/৬/৭ মাত্রা (অন্ত্যমিল -খ)