সিসি ডেস্ক: বেশ আগে থেকেই ব্যাটারিচালিত তিন চাকার ইজিবাইক আমদানি ও চলাচল বন্ধে একমত ছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত এখন উল্টে যেতে বসেছে। প্রসারিত হচ্ছে ইজিবাইক আমদানির পথ। বুধবার তিন চাকার এ বাহন আমদানি নীতির খসড়া প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্য দিয়ে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইজিবাইক আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে সরকার। চূড়ান্ত আমদানি নীতি সরকারের অনুমোদন পেলে ইজিবাইক ও এর যন্ত্রাংশ আমদানিতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে গত ১৯ আগস্ট প্রকাশিত আমদানি নীতির খসড়ায় ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছিল।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইজিবাইক আমদানি বৈধতা পায়। অবশ্য চলতি বছরের মে মাসে একটি আধা সরকারি পত্র সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেই পত্রে তিনি বলেছিলেন, ইজিবাইক জব্দ করে প্রকাশ্যে ধ্বংস করা হোক। এ জন্য একটি বন ফায়ারের আয়োজন করা যেতে পারে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেটের স্মারক নম্বরের বরাত দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, সারা দেশে বিপুলসংখ্যক ইজিবাইক চলছে। এর সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। যানটির আমদানি নিষিদ্ধ করলে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এতে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই ইজিবাইক আমদানির পক্ষে সরকারের অবস্থানের কথা জানান গতকালের বৈঠকে উপস্থিত এক মন্ত্রী।
এদিকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাবে সারা দেশে অন্তত ১০ লাখ ইজিবাইক চলাচল করছে। এগুলোর কারণে দুর্ঘটনা-ঝুঁকি বাড়ছে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক আমাদের সময়কে বলেন, ইজিবাইক আমদানি বন্ধের জন্য আমরা সুপারিশ করেছিলাম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা আমদানি নীতি প্রণয়নে গঠিত কমিটির। তিন বছর পরপর নীতি নবায়ন হয়। সেখানে আমরা না থাকায় পরে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা অফিসিয়ালি জানা নেই। আর বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ইজিবাইক বন্ধের ব্যাপারেই আমাদের অভিমত। আমদানির সুযোগ দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত হয়েছি কিনা তা জানা নেই। তাই কোন যুক্তিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তা বলা কঠিন।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ১৯তম সভায় ব্যটারিচালিত ইজিবাইক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করাসহ এসব যান আমদানি বন্ধ করা এবং রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্স না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া এসব গাড়ি আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছিল তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এরপর ২০১১ সালের ৫ মে সরকারের ৫ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সারা দেশে ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সর্বশেষ সভায়ও একই সিদ্ধান্ত ছিল।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ির স্থায়িত্ব, গুণগত মান ও নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে বিআরটিএর আপত্তি রয়েছে। তাই এসব গাড়িতে কোনো ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর নেই। এগুলোর রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না বিআরটিএ। গাড়ির স্পিড, ব্যালান্স, ওজন, পরিমাপ ইত্যাদি সাপেক্ষে বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে টেস্ট করে সুপারিশ দাখিলের নির্দেশ দিলেও বিআরটিএর কাছে কোনো রিপোর্ট জমা দেননি গাড়ির আমদানিকারকরা। অবশ্য এর আগে থেকেই সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ইজিবাইকের ‘নিবন্ধন’ দেওয়া শুরু করে। বিদ্যুতের ঘাটতি থাকায় মন্ত্রিসভার বৈঠকেও ইজিবাইকের আমদানি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
সূত্রমতে, ইজিবাইকে ইঞ্জিনের পরিবর্তে ব্যবহƒত ব্যাটারি রিচার্জ করতে দৈনিক ৩০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। দুটি ব্যাটারি ৬ ঘণ্টা পরপর বদল করতে হয়। ফলে বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার বাড়ছে। তাই ইজিবাইক আমদানি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানায় বিআরটিএ। এসব যানের রাস্তায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সংস্থাটি। নসিমন, করিমন, ভটভটির মতো ইজিবাইককেও লাইসেন্স দেয় না বিআরটিএ। আমদানিকারকরা লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানালে তাদের পরিবেশ ছাড়পত্র আনতে বলে বিআরটিএ। আমদানিকারকরা তাতে ব্যর্থ হওয়ায় যানটি লাইসেন্স পায়নি।