সিসি ডেস্ক: পুষ্টিসেবা কার্যক্রমের আওতায় ডাক্তার-নার্সদের নানা পুরস্কার ও উপহার দিচ্ছে বিভিন্ন গুঁড়ো দুধ কম্পানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান। কৌশলে আয়োজন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। এসব আয়োজনে বুঝে বা না বুঝে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসক ও নার্সরা অংশ নেন।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের আয়োজন ‘মাতৃদুগ্ধ, বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’-এর লঙ্ঘন।
এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অজুহাত হিসেবে দেখানো হয় উপযুক্ত আইনের বিধি না হওয়ার বিষয়টিকে। দুই বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও বিধি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, বিধির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। আর একটি মিটিং করার পরই খসড়া মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আইন লঙ্ঘন না করার জন্য সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগে বিএমএস কোড (মায়ের দুধের বিকল্প বা কৃত্রিম শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮৪) অনুসারে কাজ চলত। কিন্তু এটা দুর্বল আইন। পরে প্রণীত হয় নতুন আইন। ‘মাতৃদুগ্ধ, বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩’ নামে এর গেজেট প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. এস কে রায় বলেন, বিধি না হলেও ওই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে বিধি হলে কৌটার দুধ বিক্রি ও কৌটার দুধের পক্ষে কৌশলে প্রচারের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ আরো সহজ হবে।
ড. রায় বলেন, দুধ কম্পানিগুলো অনেক শক্তিশালী ও কৌশলী। তারা যেকোনোভাবে ডাক্তার ও নার্সদের প্রভাবিত করতে চায়। আবার এক শ্রেণির ডাক্তার ও নার্স প্রলুব্ধ হয়ে কম্পানিগুলোর ফাঁদে পড়েন।
নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, গুঁড়ো দুধের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসার প্রসারের জন্য অনেক আগে থেকেই নানা কায়দায় চিকিৎসকদের প্রভাবিত করছে। তারা হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডাক্তারের চেম্বারে যায়; প্রায়ই বিভিন্ন উপলক্ষে সভা-সেমিনারের আয়োজন করে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদেরও প্রলুব্ধ করে তারা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, আইনের প্রয়োগ ঘটানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারকে (স্টেকহোল্ডার) সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যত দ্রুত বিধি হবে তত মঙ্গল। পরস্পরের ওপর দায় চাপালে হবে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে, ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবে এর সুষ্ঠু প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
ডা. আমিন বলেন, যেসব ডাক্তার বা নার্স শিশুখাদ্য বিপণন কম্পানির আয়োজনে অংশ নেন, তাঁদের অনেকে যান সচেতনতার অভাবে, আবার অনেকে যান প্রলুব্ধ হয়ে। কিন্তু দায়বোধ থেকেই তাঁদের সজাগ থাকা দরকার। কারণ গুঁড়ো দুধ শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য ক্ষতিকর—এ নিয়ে এখন আর বিতর্ক নেই। তিনি বলেন, শিশুকে জন্মের পর থেকে ছয় মাস শুধুই বুকের দুধ দিতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের সঙ্গে ঘরে তৈরি সম্পূরক খাবার দিতে হবে।