সিসি ডেস্ক, ০১ জুলাই: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহন করবে কী না, তার ঠিক নেই। কিন্তু বিএনপিতে মনোনয়ন বাণিজ্য জমে উঠেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ‘ব্যক্তিগত’ সফরের অজুহাতে লন্ডনে যাচ্ছেন মনোনয়ন নিশ্চিত করতে। গাজীপুর নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপির অধিকাংশ নেতাই পরের তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানান। এজন্যই তিন সিটিতেই অংশ নিচ্ছে বিএনপি। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচনী ছক একেছে, তাতে তিন সিটিতেও তাদের বিজয় অবধারিত। আমরা হারার জন্যই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছি।’ তারমতে ‘মনোনয়ন দিলেই তারেক সাহেবের লাভ। তার পকেট ভরছে। জেতা হারা কোন বিষয় নয়।’
বিএনপির সিলেট অঞ্চলের একজন নেতা,‘দিল্লী হয়ে লন্ডনে গেছেন। সেখানে তারেক জিয়ার সাথে তার দেখাও হয়েছে। মনোনয়নের দাম দর চুরান্ত হয়েছে। দেশে ফিরে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ঐ নেতা। একই অবস্থা কুমিল্লার বিএনপির আরেক নেতার। তিনি মনোনয়নের আশায় দেখা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। ড. মোশাররফ তাকে জানান, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতা তার নেই। স্থায়ী কমিটির ঐ সদস্যই তাঁকে লন্ডনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি লন্ডন যান সিঙ্গাপুর হয়ে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এপর্যন্ত অন্তত ৫০ জন বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী লন্ডনে গেছেন। দর-দাম চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিয়েছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রতিদন্দ্বিতা করছেন। এদের কেউই বিএনপির গুরুত্বপুর্ণ নেতা নন। এরা মূলত ব্যবসায়ী। দলের অনেক সিনিয়র নেতা এদের ভালো করে চেনেও না। কিন্তু তারপরও তারেক জিয়ার আশীর্বাদে তারা এখন নির্বাচনের মাঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নূন্যতম ১০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি টাকা উঠেছে একেকটি আসনের মনোনয়নের। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন,‘আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে দূর রাখা যাবে না। যেকোন পরিস্থিতিতেই আমরা ঐ নির্বাচনে অংশগ্রহন করবো।’
তিনি এটাই বলেছেন,‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি আদায় করবে।’ ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমেদ স্বীকার করেছেন যে,‘ বিএনপি নির্বাচনে গেলে মনোনয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া।’ সম্প্রতি ব্যরিষ্টার মওদুদ লন্ডনে তারেক জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তিনি জানালেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনয়ন নিয়ে কাজ করছেন।’
এদিকে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে নানা মুখী আলোচনা চলছে। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের একজন সক্রিয় নেতা জানিয়েছেন, শুধু মনোনয়ন বাণিজ্য নয়, এখন বিএনপিতে কমিটি বাণিজ্যও চলছে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কমিটি গঠনে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন ঐ নেতা।
বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ৩০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নিয়ে তারেক রহমান মাঠে নেমেছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও টাকা নানা কৌশলে লন্ডনে পাঠিয়ে দেখা করছেন তারেক জিয়ার সঙ্গে। বিএনপির একজন নেতার মতে, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, শুধু তারেক জিয়ার অর্থ উপার্জনের জন্যই।’
উৎস: বাংলার আমরা