সিসি নিউজ ।। ধানের ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নীলফামারীর কৃষকদের মাঝে । ধানের ক্ষেতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পোঁতা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এসবের ওপর বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতিকেই ‘পার্চিং’ বলা হয়।
কৃষিবিদদের মতে, পার্চিং পদ্ধতিতে ফসলের পোকা দমন পরিবেশবান্ধব। এতে ফসলের উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে পাওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জেলার কৃষকদের মাঝে। অনেক কৃষক আমন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। পার্চিং সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় এবার ১ লাখ ১৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। আমন ফসলের খেতকে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় ৮টি বাঁশের আগা, কঞ্চি, ডাল ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতেছেন কৃষকরা।
নীলফামারী সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের বাবরিঝাড়ের কৃষক মনতাজ আলী জানান, বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি যেমন শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গে পার্চিংয়ের উপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে।
ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানীর কৃষক আব্দুল মালেক জানান, আমন ক্ষেতে পোকা দমনে এ পদ্ধতি ব্যবহার ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে অর্থ ও পরিশ্রম দুটোই কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, পার্চিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে কৃষকদের খরচ কিছুটা হলেও কমছে। এ পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছে। সেইসঙ্গে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।