ডিমলা প্রতিনিধি।। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে মেহেদী হাসান রুবেল চাকরি নেন একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্বও ছিল বেশি। তাই অন্য কিছু ভাববার অবকাশ ছিল না তার। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। একসময় সাহস করে উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে হাত দিলেন সাপের খামার গড়ার কাজে।
২০১৬ সালে সাপের খামারের জন্য পাশ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে জমি কিনে হন প্রতারণার স্বীকার। দালালের খপ্পরে পড়ে ৯ লক্ষ টাকা দিয়ে জমি কিনে টাকা আর জমি কোনটাই পাননি ফেরত। শুরুতেই বড় ধাক্কা তবুও হাল ছাড়েননি রুবেল। পরে সিদ্ধান্ত নেন মুরগির খামার গড়ার। বাবা ও বন্ধুদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ডিমলা সদর ইউনিয়নের রামডাঙ্গা গ্রামে পৈতৃক ৪৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন “বায়োটেক ফার্মল্যান্ড” নামে একটি আধুনিক মুরগির খামার। কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজের মেধা আর শ্রম দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নে এগোতে থাকেন তিনি।
রুবেলের স্বপ্নের শুরুটা ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রথমে স্বল্প পরিসরে মাত্র ২০০ মুরগি দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সাফল্যের দেখা পান। দিনে দিনে বেড়েছে মুরগির সংখ্যা। নিজ বাড়ির পাশে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা খামারে তার আয় এখন বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তিনি এখন ডিমলা উপজেলার মডেল উদ্যোক্তা।
সরেজমিন মুরগির খামারে গিয়ে দেখা যায়, আপন মনে নিজের খামারে মুরগির পরিচর্যায় ব্যস্ত রুবেল। তার খামারে রয়েছে হাইলাইন ব্রাউন জাতের ২ হাজার ২০০ মুরগি। বড় একটি শেডে চলছে মুরগির চাষ। সার্বক্ষণিক কাজ করেন চারজন কর্মচারী। রুবেল জানান, অভিজ্ঞতা ছাড়া এ কাজে প্রথমে শঙ্কা থাকলেও এখন আর সেই শঙ্কা নেই।
ইন্টারনেট ও পত্রিকায় ছাপানো বিভিন্ন খামারের সফলতার গল্প পড়েই মূলত উদ্বুদ্ধ হয়েছি। খামার শুরুর পাঁচ মাস পর থেকেই এসব মুরগি ডিম দিতে শুরু করে। সেই থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার মুরগি ডিম দেয়। জেলা-উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে ডিম কিনে নেন। এতে সব খরচ বাদে প্রতি মাসে তার আয় ৮০-৯০ হাজার টাকা। বছর শেষে লাভের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে খামার পরিচালনায় স্থানীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে তার। করোনাকালে সরকারের প্রণোদনা পেলেও পাননি ব্যাংক ঋণ বা অন্য কোনো সহযোগিতা।
রুবেল যখন সফলতার স্বপ্ন দেখছেন ঠিক তখনি এক অজানা আতঙ্ক ভর করেছে তার মনে। রুবেল আক্ষেপ করে বলেন, অনেক কষ্ট আর পরিশ্রম করে খামারটি গড়ে তুলেছি। কিন্তু পূর্ব শত্রুতার জেরে কয়েকজন প্রতিবেশী আমার খামারটি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে উঠে পড়ে লেগেছে। তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে পরিবেশ বিপর্যয়, দুর্গন্ধ, রোগ জীবাণু ছড়ানোসহ অনেক অভিযোগ তারা বিভিন্ন দপ্তরে করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এসে খামার সরিয়ে নিতেও আলটিমেটাম দিয়ে গেছে।
খামারের পাশে বসবাসকারী নুর মোহাম্মদ জানান, দুর্গন্ধে এখানে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শিশুরা খাবার খেকে পারছে না। অনেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। গ্রামবাসীর পক্ষ্যে স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে খামারটি সরানোর জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
ডিমলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু তারেক দিপু জানান, বায়োটেক ফার্মল্যান্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সরজমিনে তদন্ত করে এর কোনো সত্যতা পাইনি। ফার্মটি অনেক আধুনিকমানের ও পরিচ্ছন্ন। পরিবেশ রক্ষায় সমস্ত নিয়মনীতি মেনে ফার্মটি কাজ করছে।
ডিমলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেজাউল হাসান জানান, রুবেল একজন সফল খামারি। আমরা তার খামার পরিদর্শন করে তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা প্রদান করছি।