• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৬ পূর্বাহ্ন |

বনানীর ধর্ষক বাঁচাতেই চলছে অপপ্রচার

।। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন (মুন্নি)।।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্বার্থান্বেষী একটি কুচক্রী মহল নির্যাতিতা মেয়েটির সম্মতি ছিল বলে অপপ্রচারে লিপ্ত।মেয়েটির রেকর্ড করা বক্তব্য শুনে যেটা মনে হয়েছে বড়জোর ১৯-২০ বছরের একটি মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কামলিপ্সু কিছু বিপথগামী যুবক তাদের রসনাকে তৃপ্ত করার নোংরা খেলায় মেতেছিল সেই দিনটিতে।

ধর্ষণের মতো এতো নৃশংস করুণ ঘটনাকে ছাপিয়ে এতো রাতে মেয়েটি কেন হোটেলে গেল সবার মুখে মুখে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যেন ধর্ষণকারীরা নয় মেয়েটিই দোষী।মেয়েটি যদি আগে থেকেই সবকিছু জানে তবে সাথে করে বান্ধবী, ছোটবোন, ছোট বোনের ডাক্তার প্রেমিককে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। দুজনের সম্মতিতেই যদি সবকিছু হয় ওর বোন আর তার প্রেমিককে অন্য রুমে আঁটকে রাখতে হল কেন ? ওর বান্ধবীকেই বা কেন নাঈম আশরাফ ধর্ষণ করলো ? বাথরুমের স্বচ্ছ কাঁচের ভিতর থেকে গাড়ির ড্রাইভার আর বডিগার্ড কেন নোংরা ওই ভিডিওটি করলো ? মেয়েটি যদি খারাপ মেয়েই হবে টাকা নিয়ে দর কষাকষি না করে কেন ওকে থানায় যেয়ে আশ্রয় চাইতে হল?

মেয়েটির স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে সাদমান ওদের বন্ধু সেই যোগাযোগ ঘটিয়ে সেইখানে নিয়ে গেছে। প্রতিদিন বড় বড় হোটেলে অনেক বার্থডে পার্টির আয়োজন হয়, অনেক লোকজন সেখানে উপস্থিতও থাকে। কে জানতো তাদের সরল বিশ্বাসের সুযোগে ওই দিন তাদের সর্বনাশ ঘটেব। মেয়েটি বার বার বলেছে তারা অনেক ভেবেছে তারপর অনেক কেঁদেছ। তারা পরিবারের কথা ভেবেছে, সমাজের কথা ভেবেছে, সমালোচনার কথা ভেবেছে, নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেছে। সবকিছু ভাবার পর একটি চিন্তাই মাথার ভিতর এসেছে, ‘ উপায় নেই যা হবার হবে, থানায় যেয়ে কেস করতে হবে, জানাতে হবে সবকিছু, এভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’

এই যে সাহস নিয়ে মেয়েটির থানায় যেয়ে সব কিছু খুলে বলা, সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এই জায়গাটিতেই মেয়েটি প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। আমি ওকে স্যালুট জানাই। অন্যান্য মেয়েদের মত নির্যাতিতা এবং ধর্ষিতা হয়ে আত্মহত্যা নয় ওর প্রতি সংঘটিত অন্যায়ের ন্যায্য বিচার দাবি করেছে।

কৌশলে মেয়েটির সাথে সাফাতের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে মেয়েটিকে নষ্টা, চরিত্রহীনা, স্কট সার্ভিস বিভিন্ন নামে কলঙ্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। সাফাত, নাঈম আশরাফ, সাদমান সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছে মেয়েটি আনকোরা অর্থাৎ ভার্জিন ছিল। চিটার হালিম সাফাতের জন্মদিনের উপহার হিসেবে আনকোরা মেয়ে দিতে চেয়েছে। ওর লক্ষ্য ছিল সাফাতের টাকা।

যদি মেয়েটির সাথে সাফাতের প্রেমের সম্পর্কও থাকে তবুও তাকে ধর্ষণ করতে পারে না। ২৮শে মার্চের ধর্ষণ পরবর্তী ৩১ শে মার্চ মেয়েটি যখন সমঝোতা হিসেবে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন ব্যঙ্গ করে হাসতে হাসতে সাফাত বলে, ‘ বেবি আমাদের বিয়ে করতে চাও।’ অসহায় মেয়ে দুটির মাথায় যেন পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পরে। বুঝতে পারে কি প্রতারিতই না হয়ছে। বুঝার আরও অনেক বাকি ছিল, ধর্ষণের ঘটনার ১৭ দিন পর আবারও তাদের ডাক আসে।

এবার কেবল সাফাত আর নাঈম নয় ওদের বন্ধুর সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। রাজি না হলে নোংরা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে তাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হবে। সেইদিন মেয়ে দুজন বিচারের জন্য এগিয়ে না এলে এই কাহিনী অন্য আরও অজানা বীভৎস কাহিনীর মতো পর্দার অন্তরালেই রয়ে যেত।

হয়তো ইতোপূর্বে অনেক মেয়েই তাদের ফাঁদে পা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছে, অলক্ষ্যেই নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছে।এই সমাজে সাফাত, সাদমান, নাঈমের মত আরও অনেক ধনাঢ্য পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানেরা কতো নারীর সম্ভ্রম নষ্ট করছে কে জানে ! এখন মেয়ে এবং তাদের পরিবারও সচেতন হবে, বখে যাওয়া নষ্ট পুরুষ আর নয়!

মেয়ে দুজন নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়ে অন্যায়ের ন্যায্য বিচারের দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছে। তাদের সাহস তাদের এই বীরদর্পে এগিয়ে আসা, তাদের এই অগ্রযাত্রাকে সম্মান জানিয়ে আমিও চাই —‘ অপরাধীর বিচার হোক’ আর মেয়ে দুজন সসম্মানে এই সমাজে বিচরণ করুক। ৭১ এ বীরাঙ্গনাদের করুণ কাহিনী আমরা শুনেছি। যুদ্ধবিধ্বস্ত পরবর্তী দেশে আত্মহত্যা, কান্না আর অপবাদ ছাড়া আর কিছুই পায়নি তারা। এবার না হয় স্বাধীন দেশে ১৭ তে এসে ধর্ষকদের বিচার হোক।

উৎসঃ   পূর্বপশ্চিম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আর্কাইভ